
Category: জনদুর্ভোগ







টাঙ্গাইলে অনুমোদন ছাড়াই চলছে মানহীন পানির ব্যবসা
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও অফিসে জার ভর্তি পানি বিক্রি শুরু হয় ২০১৫ সালের দিকে। ওই সময় মক্কা ড্রিংকিং ওয়াটার নামে একমাত্র প্রতিষ্ঠান পানি সরবরাহ করত। কিন্তু কাগজপত্র জটিলতায় শুরুর মাত্র এক বছরের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে জারভর্তি পানি বিক্রিতে নামে আরো পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে তিনটিই বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে অপ্সরা জনসন ড্রিংকিং ওয়াটার (নিউ জমজম) এবং মেঘ ন্যাচারাল ড্রিংকিং ওয়াটার নামে দুটি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি সরবরাহ করছে। কিন্তু দুটি প্রতিষ্ঠানেরই ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া বিএসটিআই, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, আইসিডিডিআর,বির অনুমোদন নেই। নেই কোম্পানির নিজস্ব ল্যাব বা কেমিস্ট। এ অবস্থায় প্রতিদিন ৪০০-৪৫০ বোতল (২০ লিটারের জার) সরবরাহ করছে প্রতিষ্ঠান দুটি। সরবরাহকৃত পানির গুণগত মানও সন্তোষজনক নয়। এতে মানহীন এ পানি পান করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে সাধারণ মানুষের। গত ২৮ সেপ্টেম্বর পানি পরীক্ষার জন্য বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নমুনা দেয় অপ্সরা জনসন ড্রিংকিং ওয়াটার। ১০ অক্টোবর পরীক্ষার প্রতিবেদন দেয় বুয়েট। ওই প্রতিবেদনে অপ্সরা জনসন ড্রিংকিং ওয়াটারের পানিতে নির্ধারিত এককের তুলনায় ক্যাডমিয়াম, টোটাল কোলিফর্ম (ব্যাকটেরিয়া) ও ফিকাল কোলিফর্ম পাওয়া গেছে। ক্যাডমিয়ামের নির্ধারিত একক ০.০০৫, সেখানে অপ্সরা জনসন ড্রিংকিং ওয়াটারের পানিতে পাওয়া গেছে ০.৫৮। এছাড়া টোটাল কোলিফর্ম (ব্যাকটেরিয়া) ও ফিকাল কোলিফর্ম (মল) প্যারামিটারে টিএনটিসি (টু নিউমারাস টু কাউন্ট) উল্লেখ করা হয়েছে, যা মাত্রাতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি নির্দেশ করে। এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. শাহীনুর ইসলাম বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানের পানিতে মাত্রাতিরিক্ত ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ। তবে এসব ব্যাকটেরিয়ার শ্রেণীবিন্যাস আমরা করিনি। বোতলজাত পানির ক্রেতারা জানান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানযোগ্য পানির প্রয়োজন হয়, যা বাসাবাড়ি থেকে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এছাড়া বাইরে থেকে টিউবওয়েলের পানি বারবার আনাও কষ্টকর। এ কারণে বিশুদ্ধ পানি ভেবে বোতলজাত পানিগুলো রাখছেন তারা। তবে ক্রয়কৃত বোতলজাত ওই পানি কতটা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ, তা কেউই জানেন না তারা। মেঘ ন্যাচারাল ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরির মার্কেটিং ম্যানেজার নয়ন জানান, মাসে তাদের ফ্যাক্টরির পানি যায় প্রায় দেড় হাজার বোতল, যার মূল্য ৬০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পাঁচ বছর ধরে পানি উৎপাদন আর বিপণন করে আসছে অপ্সরা ড্রিংকিং ওয়াটার (নিউ জমজম) ও মেঘ ন্যাচারাল ড্রিংকিং ওয়াটার। অপ্সরা ড্রিংকিং ওয়াটার পানি সাপ্লাই ফ্যাক্টরির ট্রেড লাইন্সেস আর শিল্প মন্ত্রণালয়ের ট্রেডমার্ক রেজিস্ট্রেশনের আবেদন, বুয়েটে পানির টেস্ট ব্যতীত অন্য কোনো প্রাতিষ্ঠানিক কাগজ নেই। সরেজমিন অপ্সরা ড্রিংকিং ওয়াটারের ফ্যাক্টরি ঘুরে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটিতে আটজন শ্রমিক কর্মরত। এর মধ্যে একজন বোতল ধোঁয়া আর পানি ভর্তির কাজ করেন। তবে এ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের হাতে ছিল না গ্লোবস, অ্যাপ্রোন। বোতল পরিষ্কার বা ধোঁয়ার কাজে হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড ব্যবহারের কথা থাকলেও ব্যবহার হচ্ছে শুধুই পানি। এছাড়া অটোমেটিক ফিলিং মেশিনে পানি বোতলজাত করার বিধান থাকলেও এখানে সরাসরি মাটির অগভীর থেকে মোটরে তোলা পানি খোলা কলের মাধ্যমে ভরে বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। এছাড়া পানি ভর্তি জারে হাতের সাহায্যে প্লাস্টিক মুখ লাগানোসহ স্কচটেপ পেঁচাতেও দেখা গেছে। অন্যদিকে সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের ক্ষুদিরামপুর এলাকায় অবস্থিত মেঘ ন্যাচারাল ড্রিংকিং ওয়াটার ফ্যাক্টরি। গভীর রাত থেকে পানি ভর্তির কাজ শুরু হয়ে ভোরেই বন্ধ হয়ে যায় প্রতিষ্ঠানটি। তাই এ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখা যায়নি। অপ্সরা ড্রিংকিং ওয়াটার দেখভাল করেন কামাল পাশা খান। তিনি বণিক বার্তাকে বলেন, ক্রেতার ব্যবহারজনিত সমস্যায় পানির বোতলে পোকা প্রবেশ করেছিল। শুধু ব্যবসায়িক ভাবনায় ২০ হাজার টাকা জরিমানা দেয়া হয়েছিল। আমাদের কোম্পানির পানি বুয়েট দ্বারা পরীক্ষিত। ফ্যাক্টরির ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য দপ্তরে আবেদন করার প্রক্রিয়া চলছে। দাপ্তরিক অনুমতি ব্যতীত ব্যবসা পরিচালনা ঠিক কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাজার ধরতে আমরা পানি সরবরাহ করছি। বিএসটিআইয়ের টাঙ্গাইল ফিল্ড অফিসার সিকান্দার মাহমুদ বলেন, ড্রিংকিং ওয়াটারের জন্য প্রয়োজন সায়েন্স ল্যাবরেটরি, আইসিডিডিআর,বির অনুমোদনসহ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট, শ্রমিকদের শারীরিক সুস্থতা সনদ, পরিবেশের ছাড়পত্র ও কল-কারখানার সনদ। সব সনদপ্রাপ্ত হওয়ার পর এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পায়। কিন্তু এ দুই প্রতিষ্ঠান বিএসটিআইয়ের অনুমোদন পায়নি। টাঙ্গাইলের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, এ ধরনের পানি বেশির ভাগই অপরিশোধিত ও নিরাপদ নয়। এ পানি ব্যবহারে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ টাইফয়েড, হেপাটাইটিস, ভাইরাস, ডায়রিয়া, কলেরা রোগের ঝুঁকি রয়েছে। এ ধরনের পানির মধ্যে আর্সেনিকের মতো বিষাক্ত ধাতু থাকতে পারে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন এ ধরনের পানি ব্যবহারের ফলে ত্বক, কিডনি ও লিভারের ক্ষতি হতে পারে। রয়েছে ক্যান্সারের ঝুঁকিও। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ টাঙ্গাইল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী বলেন, বিএসটিআইয়ের সনদ ছাড়া পানি উৎপাদন ও বিপণন সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করা হবে। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এ ধরনের পানি উৎপাদন ও বিপণনকারী ফ্যাক্টরিগুলোর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। টাঙ্গাইল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বশির আহম্মেদ বলেন, টাঙ্গাইল শহরে পানিতে আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি। আয়রনমুক্ত পানি পেতে হলে ন্যূনতম ৪০০ ফুট গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হয়। পানি উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরিগুলো কতটা গভীর থেকে পানি উত্তোলন করছে সে বিষয়টি জানা জরুরি। অপ্সরা ড্রিংকিং ওয়াটারের পানি বুয়েট কর্তৃক যে নিরীক্ষা টেস্ট রিপোর্ট এসেছে, সেখানে কিন্তু টোটাল কোলিফর্ম (ব্যাকটেরিয়া) ও ফিকাল কোলিফর্মের (মল) উপস্থিতি অনেক বেশি পাওয়া গেছে, যা মানবদেহের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এসব বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রিমিসেস সার্টিফিকেট ও শ্রমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ নেয়নি অপ্সরা ড্রিংকিং ওয়াটার (নিউ জমজম) ও মেঘ ন্যাচারাল…

আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষিত; শহীদ মুক্তিযোদ্ধার কবর উচ্ছেদের পায়তারা
সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি : মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদারের গুলিতে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ বদিউজ্জামান ও মুক্তিযোদ্ধা নাদেরুজ্জামান এর কবর সোনাগাজীর বাদামতলী গ্রামে আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। সম্প্রতি স্থানীয় এক ভূমিদস্যু উক্ত কবরস্থান উচ্ছেদ করে কবরের জমি দখলের পায়তারা করছেন। এই ঘটনায় গত ২৯অক্টোবর…

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ও বারডেমের চারপাশে ভয়াবহ দূষণ
রাজধানীর শাহবাগে দেশের বড় দুটি হাসপাতাল। সড়কের একদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। তার বিপরীতে ডায়েবেটিকস রোগীদের নির্ভরযোগ্য চিকিৎসা কেন্দ্র বারডেম হাসপাতাল। গুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতাল এলাকা সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার কথা বলা হলেও এই হাসপাতাল দুটির আশপাশ এলাকার চিত্র আঁতকে ওঠার মতো।…
