করোনার দ্বিতীয় প্রবাহে সংক্রমণের হার বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তবে এ প্রবাহ মোকাবেলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত বলেও এ সময় মন্তব্য করেছেন তিনি। রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে গতকাল বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) আয়োজনে ‘করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলা ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না দ্বিতীয় ঢেউ কবে আসবে বা হবে। তবে আমরা প্রস্তুত আছি। শীতের দিনে মানুষের বিয়ে-শাদি, পিকনিক, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও গান-বাজনাসহ নানা কর্মকাণ্ড বাড়ে। এ কারণে লোকের সমাগম বেশি হতে পারে, যার ফলে সংক্রমণের হার বাড়তে পারে। তিনি বলেন, আমরা এ বিষয়ে সচেতন আছি। সারা দেশে চিঠি দিয়েছি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে। আমরা আরো প্রস্তুতি নেব। প্রাইভেট সেক্টরকেও প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আমরা আশা করি আমাদের করোনা বাড়বে না। আমরা যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করি, তাহলে বাড়বে না। তিনি বলেন, যদি স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলি, মাস্ক না পরি, বেখেয়ালভাবে চলাফেরা করি, তাহলে সংক্রমিত হতে পারি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমাদের দেশে দ্বিতীয় ঢেউ আসবে না। সীমিত সম্পদ ও জ্ঞান নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনা চিকিৎসায় কী লাগবে, সেটা আমরা জানতাম না। পৃথিবীর কেউ জানত না। আমরা অন্যের অভিজ্ঞতা দেখে শিখেছি। শিখে শিখে বাংলাদেশে আমরা কাজে লাগিয়েছি। শুরুতে একটি ল্যাব ছিল। এখন ১০৭ ল্যাব, কিন্তু পরীক্ষা ১০-১২ হাজারের বেশি হয় না। এটাও একটা প্রশ্ন, কেন টেস্ট বেশি হচ্ছে না? কারণ লোকে আসে না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আহ্বান করেছি। এখন আর রোগী এগিয়ে আসে না টেস্ট করানোর জন্য। যারা প্রয়োজন মনে করে, তারাই আসে। এখনো আমরা আহ্বান করব, সমস্যা দেখা দিলে আপনারা আসেন। সময়মতো চিকিৎসা নেন ও ভালো হয়ে যান। হাসপাতালে ২০ হাজার সিট ব্যবস্থাপনা করা আছে, কিন্তু সেখানে এখন রোগী কম। করোনাকালে সবখানে লকডাউন থাকলেও স্বাস্থ্য খাতে কোনো লকডাউন ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের ডাক্তার, নার্সসহ সব কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন। অনেকের জীবন দিতে হয়েছে। এ খাতের সবাই মিলেমিশে কাজ করেছে। বাংলাদেশের ওষুধের কোনো অভাব হয়নি। বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ওষুধ পাওয়া গেছে। এজন্য কোম্পানিগুলো ধন্যবাদ পেতে পারে, তারাও ভালো কাজ করেছে। এ সময় ব্যক্তি খাতের সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, অনেক সমালোচনা হয়েছে। কিন্তু এসব জায়গায় কোনো লকডাউন ছিল না। পৃথিবীর কোনো দেশের স্বাস্থ্য খাতের এত সমালোচনা হয়নি, যতটা না বাংলাদেশের হয়েছে। তবে এখন সবাই প্রশংসা করে। প্রধানমন্ত্রী কয়েকবার আমাদের মন্ত্রণালয়ের প্রশংসা করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ বলেন, সবার সমন্বিত কাজের ফলে এখন দেশের অবস্থা অনেক ভালো। অনেক সংকট ও অভিযোগের মধ্যেও সংশ্লিষ্টরা অনেক ভালো কাজ করেছেন। ঢেউ নিয়ে আমরা যেটা বলছি, তার বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি আমি দেখি না। প্রস্তুতি রাখতে হবে, আসলে মোকাবেলা দরকার, না এলে ভালো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, শীতে অবস্থা খারাপ হতে পারে। এজন্য প্রস্তুতি চলছে। আমরা বসে নেই। তবে ভ্যাকসিনসহ অন্যান্য চিকিৎসার কথা না ভেবে দীর্ঘমেয়াদে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। ভ্যাকসিন ৫০-৭০ শতাংশ কাজ করবে। কোনো ভ্যাকসিন যেহেতু শতভাগ কাজ করবে না, সুতরাং কোনো ধরনের ঢিলেমি না করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করছি। আলোচনা সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সভাপতি এমএ মুবিন খান এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিপিএমসিএর সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার…